মহিউদ্দিন তুষার: জাতীয় নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় একদফার আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আগামী ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচার শুরুর দিন থেকে ৭ জানুয়ারি ভোটের মধ্যবর্তী সময়কে দাবি আদায়ের ‘মোক্ষম সময়’ বিবেচনা করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপিসহ নির্বাচনে না আসা দলগুলো। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তারিখে ভোট ঠেকানোই তাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে নির্বাচন বয়কট করা সব দলকে একমঞ্চে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।
আজ ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। ক্ষমতাসীনরা ‘মানবাধিকারের পরোয়া না করে একতরফাভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তা পশ্চিমাসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে ফের তুলে ধরতে চায় তারা।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করবে গুমের শিকার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাক। এতে বিএনপির কারাবন্দি, গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীর স্বজনরা অংশগ্রহণ করবেন। বেলা ১১ টায় বিএনপি মানববন্ধন হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। এ বিষয়ে মহানগর বিএনপি সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। অন্যান্য জেলায় মানববন্ধন সফল করতে তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের দিক থেকে কোনো বাধাবিপত্তি এলে তা প্রতিহত করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে এ মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করতে হবে। ঢাকাসহ সারা দেশের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে বলব, যেসব পরিবার নিপীড়ন-নির্যাতন, গুম-খুনের শিকার হয়েছে, সেসব পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসে আপনারা মানববন্ধনে উপস্থিত করবেন। তিনি বলেন, দেশের চলমান যে শাসন ব্যবস্থা, আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্রকে যেভাবে ধ্বংস করেছে, মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে, দুর্নীতি-লুটপাট করেছে। রাজনৈতিক নেতাদের গুম করছে, খুন করছে, প্রতিমুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, এগুলো আমরা সারা পৃথিবীকে জানিয়েছি এবং জানাবো।
বিএনপির পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপতের শরিকরাও মানবাধিকার দিবসে মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করবে। গণতন্ত্র মঞ্চ ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় কর্মসূচি করবে। এ দিন ঢাকায় সকাল সাড়ে ১১টায় কারওয়ান বাজারে মানবাধিকার কমিশনের সামনে মানববন্ধন করবে ছয় দলীয় এ জোট।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকারসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম-খুন, গ্রেপ্তার, গায়েবি-ফরমায়েশি মামলায় জেলে দেওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও তুলে ধরা হবে। তারা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাই। সেটা সম্ভব হলে পরবর্তীকালে গণমিছিল, সমাবেশের মতো কর্মসূচি আসতে পারে। সরকার যদি আবারও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করে, কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে হরতাল-অবরোধ কিংবা এ ধরনের কর্মসূচি আমাদের বিবেচনার মধ্যে থাকবে।

২৮শে অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ ও সংঘাতের পর থেকে ব্যাপক গ্রেফতার ও মামলায় জর্জরিত এখন বিএনপি। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের আটক করছে পুলিশ। বিভিন্ন মেয়াদে দেয়া হচ্ছে কারাদণ্ডও। এমন প্রেক্ষাপটে সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক কাজ করছে। ঢাকায় পুলিশ হত্যা ও নাশকতা মামলা এবং পরবর্তীকালে অবরোধ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে মামলা হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বলেও জানা যায়। ঢাকাসহ সারাদেশে মামলা এবং পুলিশের অভিযানে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করছে বিএনপি ।

বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের একটি ফোরাম দাবি করছে, বিএনপির ‘শতাধিক’ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপকভাবে কারাদণ্ড দেবার খবরটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়ছে। বিএনপির অভিযোগ, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হয়ে ‘পূর্ব-পরিকল্পিত’ভাবে তাদের নেতা-কর্মীদের সাজা দেয়া হচ্ছে।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল অভিযোগ করেন, বিএনপির নেতারা যাতে ভবিষ্যতে প্রার্থী হতে না পারে সেজন্যই এই সাজা দেয়া হয়েছে।

 

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email