বিশেষ প্রতিবেদক: শারদীয় দুর্গা পূজায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে টানা চারদিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারী কর্মচারী ও কর্মকর্তারা। এ চারদিন ছুটি পাওয়ায় শুধু হিন্দুসম্প্রদায় নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোকজন পরিবার পরিজনদের নিয়ে ছুটি উপভোগ করতে ইতোমধ্যে রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ ঘনিষ্ট স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন। আবার অনেকে স্বপরিবারে সমুদ্র সৈকতে আনন্দ ভ্রমনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে এই লম্বা ছুটি। এর মধ্যেই শহর ছাড়তে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ। গতকাল বুধবার বিকেল থেকে রাজধানী ফাঁকা হচ্ছে। দেখা যাবে না চিরাচেনা যানজট।

চলমান শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি বৃহস্পতিবার একদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত মঙ্গলবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দুর্গাপূজার ছুটি এবছর একদিন বাড়ানো হয়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে বুধবার সন্ধ্যা ও রাতে ঢাকা ছেড়েছেন অনেক মানুষ। এ জন্য রাজধানীর বাসস্টেশন, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাটে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এই টানা ছুটিতে ঢাকা অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। এ সুযোগে ছিনতাই ও চোরচক্রের সদস্যরা যাতে তৎপর হয়ে উঠে। এ সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তালা ভাঙ্গা দুধর্ষ চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মত ঘটনা ঘটে। এ আশঙ্কা করছেন মহানগরবাসী। তবে আগের তুলনায় এখনকার পুলিশের নিষ্কিতাকে দায়ী করছেন তারা।

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, এ লম্বা ছুটিতে মহানগর নিরাপত্তার পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠে থাকবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিট। এ ছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। তাদের পরিকল্পনায় মধ্যে টহল কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নগরবাসীকে সচেতন করতেও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। ছুটিতে ঘরবাড়ি ভালো করে লক করার আহ্বান জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ছুটিতে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ায় ঢাকা ফাঁকা হয়ে যায়। তাই সবাইকে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। চুরি-ছিনতাই রোধে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ডিবি, থানা পুলিশ এবং সাদা পোশাকে পুলিশ একসঙ্গে কাজ করবে। ফলে আগের মতো এখন আর ছিনতাই হওয়ার শঙ্কা নেই। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগেকার পুলিশ আর এখনকার পুলিশ এক নয়, পুলিশ অনেকটা মানবিক এবং সত্যেও পথের পাথেয়। পুলিশ রাজধানীবাসীর জান-মালের নিরাপত্তায় সচেষ্ট থাকবে। তবে জনগনের সাহায্য এবং সহযোগিতার জন্য তিনি আহবান জানান। এদিকে পুলিশের পাশাপাশি ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে র‌্যাব। তাদের গোয়েন্দা দল, চেকপোস্ট, রোবাস্ট প্যাট্রল ও টহল টিমের পাশাপাশি কিছু এলাকার জন্য বিশেষ দল ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার সাইফুল ইসলাম বলেন, টানা ছুটিতে ঢাকা অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। এ সুযোগে ছিনতাই ও চোরচক্রের সদস্যরা যাতে তৎপর হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য এলাকাভিত্তিক গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম চলছে র‌্যাবের। প্রত্যেক পাড়া-মহল্লার বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে র‌্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর দেওয়া হচ্ছে যাতে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়। ফাঁকা ঢাকায় ছিনতাই রোধে চিহ্নিত রাস্তাসহ প্রত্যেক সড়ক ও পাড়া-মহল্লায় মোটরসাইকেল প্যাট্রল টিম ২৪ ঘণ্টা টহলে থাকবে। যাতে করে কোনো নাগরিক ছিনতাইকারীর কবলে না পড়েন।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করব কেউ যদি খালি বাসাবাড়িতে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন আমাদের জানাতে পারেন, আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমাদের নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম অনেক বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পূজার ছুটিতে অনেকেই বাড়ি যাবেন। পুজার টানা ছুটিতে ফাঁকা বাড়িতে কেউ যাতে অপরাধ সংঘটিত না করতে পারে সেই জন্য আপনারা ফ্ল্যাট বাড়ির নিরাপত্তার জন্য পাহারাদার নিয়োজিত করেন। অনেক সময় দেখা যায় অপরাধ সংঘটিত হলে সিসিটিভির ক্যামেরা অন্যদিকে মুখ করে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক আছে কি না এবং যেদিকে মুখ করে থাকার কথা সেদিকে আছে কি না, তা আপনারা চেক করে নেবেন। যাতে করে অপরাধ সংঘটিত হলে পাহারাদার না ধরতে পারলেও পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারে।

রাজধানীবাসীকে ১৩টি নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ময়নুল ইসলাম জানান, বাসাবাড়িতে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা বসাতে হবে। আগে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরা সচল আছে কি না, সেটি পরীক্ষা করতে হবে। বাসার চারপাশে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়া নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণালংকার ব্যাংক কিংবা নিকটাত্মীয়দের কাছে নিরাপদে রাখতে হবে। রাতে কিংবা দিনে একসঙ্গে মুখে মাস্ক এবং মাথায় ক্যাপ পরিহিত অপরিচিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি করতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে হবে।

এমটি/ এএটি

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email