জাবি প্রতিনিধি: সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দাবিতে অনলাইন ক্লাস বর্জনের ডাক দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ তথ্যমতে বিভিন্ন অনুষদের অন্তত ২০টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের নিয়মিত ক্লাস বর্জন করেছে। তবে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা।
এর আগে, গত সোমবার সশরীরে ক্লাস শুরুসহ তিন দফা দাবিতে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় নবীন শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন, সকল অনুষদ ও বিভাগীয় প্রধানদের বেনামি ই—মেইলের মাধ্যমে সশরীরে ক্লাস শুরু ও অনলাইন ক্লাস বর্জন করার কথা জানায় তারা। দাবি পূরণ না হওয়ায় গতকাল থেকেই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করতে শুরু করে। সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার অন্তত ২০ টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা সে দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লাস বর্জন করে।
কলা ও মানবিকী অনুষদের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনুষদভুক্ত বাংলা, ইতিহাস, দর্শন, জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ, চারুকলা ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস বর্জন করেছে। তবে ইংরেজি বিভাগে অনলাইনে একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে সমাজবিজ্ঞান অনুষদে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা একযোগে ক্লাস বর্জন করেছে। অপরদিকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ ব্যতিত অন্যান্য বিভাগে শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অনুষদের গণিত, রসায়ন, পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস বর্জন করেছে। জীববিজ্ঞান অনুষদের ফার্মেসী ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে ইতোমধ্যে ক্লাস বর্জন করেছে। আইন অনুষদেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
এছাড়া ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি ও তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরাও ক্লাস বর্জনের ডাকে সাড়া দিয়েছে।
গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ জানান, আমি বিশ^বিদ্যালয়ের বাইরে থাকায় বিষয়টি জানতে পারিনি। মাত্রই শুনলাম। আমরা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিবো। আশা করা যায় দ্রুত এ অবস্থার অবসান ঘটবে।
জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নূহু আলম বলেন, আমি ফেসবুকে দেখেছি যে ওরা একটা তারিখ দিয়েছে ১৬ তারিখ বা এমন একটা সময়ে তারা ক্লাস বর্জন করবে। তবে ভিসি স্যার অবশ্য চেষ্টা করছেন যেন দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা যায়। জানুয়ারির মধ্যেই আশা করি ওরা সশরীরে ক্লাস শুরু করতে পারবে।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ জানান, কয়েকটি বিভাগে ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করেছে বলে শুনেছি। আমি বিভাগের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করছি।
আইন অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক তাপস কুমার দাস জানান, দুইদিন আগে আমার কাছে ইমেইলে ও হোয়াটসঅ্যাপে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনের একটা মেইল পাঠিয়েছে। গতকালও আমাদের বিভাগে ক্লাস হয়েছে। ৬৩ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে এসেছে। আজকেও আমাদের শিক্ষক ক্লাসে শিডিউল দিয়েছে। তবে ক্লাসে ছাত্র ছিল কম। আমরা বিশ^বিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছি। বিশ^বিদ্যালয় যদি আজকে থেকে বলে সরাসরি ক্লাস তাহলে সরাসরি হবে, আর যদি বলে অনলাইনে চলবে তাহলে এভাবেই চলবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩০ নভেম্বর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। বিগত বছরের ১৮ জুন থেকে ২২ জুন তাদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সশরীরে নবীনদের ক্লাস শুরুর আগেই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তির আবেদন ও পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।