একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, আমাদের অহংকার, গৌরব ও প্রেরণার জায়গা। কোনো কোনো মহৎ দিন কখনও কখনও নিয়ে আসে যুগান্তরের সম্ভাবনা। বাঙালির জাতীয় জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি তেমনই একটি দিন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার স্মৃতি-চিহ্নিত এই দিনটি সংগ্রামের জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় উজ্জ্বল এবং রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর।
একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মূলমন্ত্র। বাঙালিকে করেছে একতাবদ্ধ। এই একতাবদ্ধে উজ্জীবিত হয়েই বাঙালিদের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে স্বাধীনতার চেতনা। এই চেতনা থেকেই আজ আমরা স্বাধীন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে তরুণদের ভাবনা নিয়ে লিখেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার ব বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মিজানুর রহমান।

“বায়ান্নর চেতনা চিত্রায়িত হোক ”

ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া বাঙালীর ইতিহাসে অনবদ্য অবদান। বায়ান্নর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আমাদের ঐক্যবদ্ধতা ও দৃঢ়চেতা মনোভাবকে প্রস্ফুটিত করে তোলে।ভাষা শহীদগন যে বার্তা দিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছে তা আজ মিয়্রমাণ যার নানাবিধ কারণ রয়েছে।আমাদের সামগ্রিক জীবনাচার ও কর্মে বাংলার যথার্থ প্রয়োগ জরুরী। দেশীয় নানাবিধ কার্যক্রমে ভিনদেশী শব্দ ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি যা আমাদের মূল উদ্দেশ্য পরিপন্থী। বায়ান্ন আজ একদিনের আনুষ্ঠানিকতা যা জাতিসত্ত্বার পরিচায়ক। পরিচায়ককে তার নিজস্ব কক্ষপথে সুন্দর ও স্বার্থক রূপে প্রদক্ষিণ করতে দেয়া উচিত নতুবা নব্য কিছুর আশংকা থাকে।ভাষা আন্দোলনের পরিপূর্ণতা পেতে সকল স্তরে বাংলা প্রচলন সময়ের দাবী। আশাকরি যথা শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে
জে এম রফিকুল সরকার
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

“ আঞ্চলিকতা আমার এজন্যে এত আদরের, প্রান খুলে কথা বলা যায় যে ”

বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়াটা আমি অনেক উপভোগ করি,কারণ ভাষা, আঞ্চলিক ভাষা। শুধু নিজ ক্লাসের ৬০ জনের সাথে কথা বলেই বোঝা যায়, এই একই ভাষার কত রুপ, কত সুর, কত টান। টাংগাইলের মেয়েটি কথা বললে মনে হয় গানের সুরে বলে, চট্টগ্রামের ছেলেটিকে আবার কথার মাঝে মাঝে থামিয়ে দুইবার শুনতে হয়, অনেক দ্রুত যে। অনেকেই আবার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননা, হীনম্মন্যতায়ও ভোগেন। আবার ওপিঠের গল্প হচ্ছে, হঠাৎ নিজের এলাকার মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া, প্রাণখুলে কথা বলা, শেকড়ের কাছে কিছুক্ষণের জন্য ফিরে যাওয়া। আঞ্চলিকতা আমার এজন্যে এত আদরের, প্রান খুলে কথা বলা যায় যে।
জাঈবা জাফরিন নুভা
শিক্ষার্থী, আইন ও বিচার বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

“একুশ হোক জাতির অনুপ্রেরণার উৎস ও দিকনির্দেশক বাতিঘর”

একুশ আমাদের জাতীয় জীবনের বিষাদময় অহংকার আর গৌরবময় অর্জনের দিন। বছর পরিক্রমায় দিনটি আসে জাতির সূর্যসন্তানদের আত্মত্যাগের পুন্যস্মৃতি নিয়ে।কিন্তু, আমরা কি তাদের এই আত্মত্যাগের মহীমাকে সত্যিই অন্তরে লালান করতে পেরেছি? অশুদ্ধ উচ্চারণ, ভুল বানান, শব্দ দিত্বতা ও ক্রমবর্ধমান ইংরেজি শব্দের ব্যবহার অবশ্য ভিন্ন কথাই বলে। ভাষা শহীদের অপরিশোধ্য ঋণের প্রতিদান আমাদের এই এক দিনের আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয় বরং বছরব্যাপী বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার ও বিশ্ববাসীকে আমরা আমাদের মাতৃভাষার উৎপত্তি,ইতিহাস ও গৌরবগাঁথা জানানোর মাধ্যমে ভাষা শহীদের স্মৃতিকে করে রাখতে পারি চির অম্লান ও স্বমহিমায় ভাস্বর। একুশের চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক, জাতীয়তাবোধে,মানবিক মানবতায়,অসাম্প্রদায়িকতায়,শোষণ মুক্তির প্রেরণায় ও প্রতিবাদীর হার না মানার মানসিকতায়।বিশ্বের বহু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষা আজ বিলুপ্তপ্রায় তাদের সেই অস্তিত্ব সংকটে থাকা মাতৃভাষার সংরক্ষণে যদি নিজেদের শামিল করতে পারি তো সেটিই হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। একুশ জাতির জন্য হয়ে থাক অনিঃশেষ অনুপ্রেরণার উৎস ও দিকনির্দেশক বাতিঘর।

তারিকুল মৃধা
শিক্ষার্থী, আইন ও বিচার বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ।

“বাংলা আমাদের শুধু মাতৃভাষাই নয়, বাংলা আমাদের অস্তিত্বের অবলম্বন ”

আমার মতে, মাতৃভাষা হচ্ছে ঐ ভাষা, যে ভাষায় আমরা আমাদের লালিত স্বপ্নগুলো লালন করি। মাতৃভাষার জন্য বুকের রক্ত দেওয়ার গৌরবময় শোকের ঐতিহ্যকে বিশ্বজনীন আনন্দে রূপান্তরিত করার প্রয়াস পেয়েছে বাঙালি। মাতৃভাষা বাংলার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির জীবনীশক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে বাংলা ভাষার বিকৃত ব্যবহারের মাত্রা এতো বেড়ে গেছে যে সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে নতুন করে ভাবনা জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্তমানের সব স্থানে সহজলভ্য সংবাদপত্র থেকে শুরু করে নামিদামি বইয়ের দোকানে, বাংলা বইয়ের পাতায় সহসাই চোখে পড়ে অসংখ্য ভুল বানানের রাজত্ব, বানানের প্রমিত রীতির অবমাননা। বাংলা আমাদের শুধু মাতৃভাষাই নয় তথাপি বাংলা আমাদের অস্তিত্বের অবলম্বন, তাই এ ভাষার মর্যাদা রক্ষার্তে বিকৃত ব্যবহার রোধে যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মহান ভাষা শহীদদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

মিজানুর রহমান কনিক
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email