রাজিব হোসেন রাজন, শরীয়তপুর: শরীয়তপুরে কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে ট্রাইকো কম্পোষ্ট সার। ছত্রাক থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। সেই সারে উর্বর হচ্ছে জমি। সেই জমিতে বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে ফুটছে হাসি। শরীয়তপুরের জাজিরায় ছত্রাক থেকে এই সার উৎপাদন করছেন তরুণ উদ্যোক্তা আলী হোসেনসহ আরও কয়েকজন। তাদের থেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অন্যরাও। গবেষকরা বলছেন এই সার পরিবেশ বান্ধব ও বিষ মুক্ত ফসলের সহায়ক।
শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের চরখামার এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন। তিনি তার বাড়িতে কয়েকটি গাভী লালন পালন করতেন। সেই গাভীর খাবার কিনতে তার হিমশিম খেতে হতো। ২০২২ সালে এসডিএস এর পরামর্শে পিকেএসএফ এর অর্থায়নে খামারের পাশে গড়ে তুলেন ছোট একটি জৈব সারের কারখানা। সেখান থেকে মাসে গড়ে উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ টন জৈব সার। প্রতি কেজি জৈব সার বিক্রি করেন ১৬ টাকা ধরে। এ জৈব সার বিক্রি করে এখন তিনি খুব ভাল আছেন, চিন্তা করতে হয়না গরুর খাবারের জন্য। স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে তার সংসারে।
সরেজমিনে শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলার চরখামার গ্রামে আলী হোসেনের ট্রাইকো কম্পোস্ট সারের কারখানা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ঝুরঝুরে সার প্যাকেট করছেন তিনি। তার কারখানা থেকে কৃষকরা এই সার কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কারখানার পাশে নার্সারি ও ফলের বাগান রয়েছে। পেঁপে বাগানে প্রয়োগ করা হয়েছে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার। বাগানের গাছগুলোতে হয়েছে বাম্পার ফলন।
এসডিএস এর কৃষি অফিসের সূত্র জানায়, ট্রাইকো কম্পোস্ট হলো এক ধরনের জৈব সার, যার মূল উপাদান ট্রাইকোডার্মা নামের এক ধরনের উপকারী ছত্রাক। বিভিন্ন জৈব উপাদান, যেমন গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, সবজির উচ্ছিষ্ট, কচুরিপানা, কাঠের গুঁড়া, ভুট্টার ব্রান, চিটাগুড়, ছাই, নিমপাতা ও ট্রাইকোডার্মা ছত্রাকের অণুবীজ নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে তা বিশেষ উপায়ে হাউসে ৪০-৪৫ দিন রেখে পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয় ট্রাইকো কম্পোস্ট। এই কম্পোস্ট সার তৈরির সময় হাউস থেকে নির্গত তরল নির্যাসকে ট্রাইকো লিচেট বলে। ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদনে কৃষক দুই ভাবে লাভবান হচ্ছেন। প্রথমত, এ সার জমিতে ব্যবহার করে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। এ ছাড়া ট্রাইকো লিচেট ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগবালাই দমনে তা ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই কৃষকদের রোগবালাই দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না।
সূত্র আরও জানায়, পিকেসেফ এর অর্থায়নে এসডিএস এর সহযোগিতায় প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ‘ট্রাইকো কম্পোস্ট’ উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত সার জমিতে ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা।
জাজিরা চরখামার গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, এসডিএস এর কৃষি বিভাগের পরামর্শে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। মাসে ২০ টন সার উৎপাদন করেন তিনি। এটি তার ও অন্যান্য কৃষকের নার্সারি ও জমিতে ব্যবহার ভালো ফলন পেয়েছেন। এই সার মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা বেশি প্রচার করলে উদ্যোক্তা ও কৃষক আরও বেশি উপকৃত হবেন।
ওই অঞ্চলের কৃষকরা জানান, ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদনে কৃষক দুই ভাবে লাভবান হচ্ছেন। এই সার জমিতে ব্যবহার করে কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। এ ছাড়া ট্রাইকো লিচেট ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগবালাই দমনে তা ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই কৃষকদের রোগবালাই দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে এখন তারা ট্রাইকো কম্পোস্ট সারের ব্যবহারের ধিকে ঝুকছেন, বিষমুক্ত ফলনও পাচ্ছেন ভালো । বিভিন্ন সবজি ও পেঁপে বাগানে প্রয়োগ করা হয়েছে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার। বাগানের গাছগুলোতে হয়েছে বাম্পার ফলন। এতে খুশি কৃষকও।
এসডিএস এস এর কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন,ট্রাইকো কম্পোস্ট থেকে উৎপাদিত সার ও লিচেট ব্যবহার করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এ জন্য পিকেএসএফ এর অর্থায়নে এসডিএস এর সহযোগিতায় ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন ও লিচেট ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’ বিষমুক্ত সবজি চাষে ট্রাইকো কম্পোস্ট সারের বিকল্প নেই।
তিনি এর উপকারিতা সম্পর্কে আরও জানান, ছত্রাক সার মাটি ও ফসলবান্ধব। একটি ফসলের জন্য উপকারী সব প্রায় সব গুণ আছে এই সারে। ট্রাইকো কম্পোস্ট নামে পরিচিত এই সার ব্যবহারে মাটির গঠন ও বুনট উন্নত হয়। পানি ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে অপচয় রোধ করে। এ সার মাটির অম্লত্ব ও লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে ফসলের উৎপাদন ও গুণগত মান বেড়ে যায়। সেই সার মাটিতে থাকা ক্ষতিকারক ছত্রাকের খাবার উপকারী ছত্রাক খেয়ে ফেলে। এতে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা পায়। ফলন বাড়ায় লাভবান হয় কৃষক।
এমটি/ এএটি